161 বার দেখা হয়েছে
"ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে করেছেন

1 টি উত্তর

0 জনের পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
সুরা আহকাফের শানে নুযূল:

নবীর (সা) পবিত্র জীবনে নবওয়াতের ১০ম বছর ছিল অত্যন্ত কঠিন বছর । তিন বছর ধরে কুরাইশদের সবগুলো গোত্র মিলে বনী হাশেম এবং মুসলমানদের পুরোপুরি বয়কট করে রেখেছিলো । নবী (সা) তাঁর খান্দানের লোকজন ও মুসলমানদের সাথে শে’বে আবি তালিব * মহল্লায় অবরুদ্ধ হয়ে ছিলেন । কুরাইশদের লোকজন এই মহল্লাটিকে সব দিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো । এ অবরোধ ডিঙিয়ে কোন প্রকার রসদ ভেতরে যেতে পারতো না । শুধু হজ্জের মওসুমে এই অবরুদ্ধ লোকগুলো বের হয়ে কিছু কেনাকাটা করতে পারতো । কিন্তু আবু লাহাব যখনই তাদের মধ্যে কাউকে বাজারের দিকে বা কোন বাণিজ্য কাফেলার দিকে যেতে দেখতো চিৎকার করে বণিকদের বলতো, ‘এরা যে জিনিস কিনতে চাইবে তার মূল্য এত অধিক চাইবে যেন এরা খরিদ করতে না পারে । আমি ঐ জিনিস তোমাদের নিকট থেকে কিনে নেব এবং তোমাদের লোকসান হতে দেব না । একাধারে তিন বছরের এই বয়কট মুসলমান ও বনী হাশেমদের কোমর ভেঙে দিয়েছিলো । তাদেরকে এমন সব কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়েছিলো যখন কোন কোন সময় ঘাস এবং গাছের পাত খাওয়ার মত পরিস্থিতি এসে যেতো ।* শে’বে আবি তালিব মক্কার একটি মহল্লার নাম । এখানে বনী হাশেম গোত্রের লোকজন বসবাস করতেন । আরবী ভাষায় ——–শব্দের অর্থ উপত্যকা বা পাহাড়ের মধ্যবর্তী ক্ষুদ্র বাস যোগ্য ভূমি । মহল্লাটি যেহেতু ‘আবু কুরাইস ’ পাহাড়ের একটি উপত্যকায় অবস্থিত ছিল এবং আবু তালিব ছিলেন বনী হাশেমদের নেতা । তাই এটিকে শে’বে আবি তালিব বলা হতো। পবিত্র মক্কার যে স্থানটি বর্তমানে স্থানীয়দের বর্ণনানুসারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম স্থান হিসেবে পরিচিত তার সন্নিকটেই এই উপত্যকা অবস্থিত ছিল । বর্তমানে একে শে’বে আলী বা শে’বে বনী হাশেম বলা হয়ে থাকে ।অনেক কষ্টের পর এ বছরই সবেমাত্র এই অবরোধ ভেঙ্গেছিলো । নবী (সা) চাচা আবু তালিব, যিনি দশ বছর ধরে তাঁর জন্য ঢাল স্বরূপ ছিলেন ঠিক এই সময় ইন্তেকাল করেন । এই দুর্ঘটনার পর এক মাস যেতে না যেতেই তাঁর জীবন সঙ্গিনী হযরত খাদীজাও ইন্তেকাল করেন যিনি নবুওয়াত জীবনের শুরু থেকে ঐ সময় পর্যন্ত নবীর (সা) জন্য প্রশান্তি ও সান্তনার কারণ হয়ে ছিলেন । একের পর এক এসব দুঃখ কষ্ট আসার কারণে নবী (সা) এ বছরটিকে (আরবী) “আমুল হুযন” বা দুঃখ বেদনার বছর বলে উল্লেখ করতেন ।হযরত খাদীজা ও আবু তালিবের মৃত্যুরপর মক্কার কাফেররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে আরো অধিক সাহসী হয়ে উঠলো এবং তাঁকে আগের চেয়ে বেশী উত্যক্ত করতে শুরু করলো । এমন কি তাঁর জন্য বাড়ীর বাইরে বের হওয়াও কঠিন হয়ে উঠলো । ইবনে হিশাম সেই সময়ের একটি ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, একদিন কুরাইশদের এক বখাটে লোক জনসমক্ষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাথায় ধূলা নিক্ষেপ করে।অবশেষে তিনি তায়েফে গমন করলেন । উদ্দেশ্য সেখানে বনী সাকীফ গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দেবেন । যদি তারা ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে অন্তত এ মর্মে তাদের সম্মত করাবেন যেন তাঁকে তাদের কাছে শান্তিতে থেকে তারা ইসলামের কাজ করার সুযোগ দেবে । সেই সময় তাঁর কাছে কোন সওয়ারীর জন্তু পর্যন্ত ছিল না । মক্কা থেকে তায়েফ পর্যন্ত গোটা পথ তিনি পায়ে হেঁটে অতিক্রম করলেন । কোন কোন বর্ণনা অনুসারে তিনি একাই তায়েফ গিয়েছিলেন এবং কোন কোন বর্ণনা অনুসারে শুধু যায়েদ ইবনে হারেস তাঁর সাথে ছিলেন । সেখানে পৌঁছার পর তিনি কয়েক দিন সেখানে অবস্থান করলেন এবং সাকীফের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রত্যেকের কাছে গিয়ে আলাপ করলেন । কিন্তু তারা তাঁর কোন কথা যে মানলো না শুধু তাই নয়, বরং স্পষ্ট ভাষায় তাদের শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার হুকুম শুনিয়ে দিল । কেননা তারা শংকিত হয়ে পড়েছিলো তাঁর প্রচার তাদের যুবক শ্রেণীকে বিগড়ে না দেয় । সুতরাং বাধ্য হয়েই তাঁকে তায়েফ ত্যাগ করতে হলো । তিনি তায়েফ ত্যাগ করার সময় সাকীফ গোত্রের নেতারা তাদের বখাটে ও পাণ্ডাদের তাঁর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিল । তারা পথের দুই পাশ দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত তাঁর প্রতি বিদ্রূপবাণ নিক্ষেপ, গালিবর্ষণ এবং পাথর ছুঁড়ে মারতে মারতে অগ্রসর হতে থাকলো । শেষ পর্যন্ত তিনি আহত হয়ে অবসন্ন হয়ে পড়লেন এবং তাঁর জুতা রক্তে ভরে গেলো । এ অবস্থায় তিনি তায়েফের বাইরে একটি বাগানের প্রাচীরের ছায়ায় বসে পড়লেন এবং আল্লাহর কাছে এই বলে ফরিয়াদ করলেনঃহে আল্লাহ! আমি শুধু তোমার কাছে আমার অসহায়ত্ব ও অক্ষমতা এবং মানুষের দৃষ্টিতে নিজের অমর্যাদা ও মূল্যহীনতার অভিযোগ করছি । হে সর্বাধিক দয়ালু ও করুণাময়! তুমি সকল দুর্বলদের রব । আমার রবও তুমিই । তুমি আমাকে কার হাতে ছেড়ে দিচ্ছ? এমন কোন অপরিচিতের হাতে কি যে আমার সাথে কঠোর আচরণ করবে? কিংবা এমন কোন দুশমনের হাতে কি যে আমার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করবে? তুমি যদি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট না হও তাহলে আমি কোন বিপদের পারোয়া করি না । তবে তোমার নিরাপত্তা ও কল্যাণ লাভ করলে সেটা হবে আমার জন্য অনেক বেশী প্রশস্ততা । আমি আশ্রয় চাই তোমার সত্তার সেই নূরের যা অন্ধকারকে আলোচিত এবং দুনিয়া ও আখেরাতের ব্যাপারসমূহের পরিশুদ্ধ করে । তোমার গযব যেন আমার ওপর নাযিল না হয় তা থেকে তুমি আমাকে রক্ষা করো এবং আমি যেন তোমার ক্রোধ ও তিরস্কারের যোগ্য না হই । তোমার মর্জিতেই আমি সন্তুষ্ট যেন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও । তুমি ছাড়া আর কোন জোর বা শক্তি নেই । ” (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬২)ভগ্ন হৃদয় ও দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ফিরে যাওয়ার পথে যখন তিনি “কারনুল মানাযিল” নামক স্থানের নিকটবর্তী হলেন তখন মাথার ওপর মেঘের ছায়ার মত অনুভব করলেন । দৃষ্টি তুলে চেয়ে দেখলেন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম সামনেই হাজির । জিবরাঈল ডেকে বললেনঃ “আপনার কওম আপনাকে যে জবাব দিয়েছে আল্লাহ তা শুনেছেন । এই তো আল্লাহ পাহাড়ের ব্যবস্থাপক ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন । আপনি যা ইচ্ছা তাকে নির্দেশ দিতে পারেন । ” এরপর পাহাড়ের ব্যবস্থাপক ফেরেশতা তাঁকে সালাম দিয়ে আরজ করলেনঃ আপনি যদি আদেশ দেন তাহলে দুই দিকের পাহাড় এই সব লোকদের ওপর চাপিয়ে দেই । ” তিনি বললেনঃ না, আমি আশা করি আল্লাহ তাদের বংশ এমন সব লোক সৃষ্টি করবেন যারা এক ও লা-শরীক আল্লাহর দাসত্ব করবে । ” (বুখারী, বাদউল খালক, যিকরুল মালাইকা, মুসলিম, কিতাবুল মাগাযী, নাসায়ী, আলবু’য়স) ।এরপর তিনি নাখালা নামক স্থানে গিয়ে কয়েক দিনের জন্য অবস্থান করলেন । এখন কিভাবে মক্কায় ফিরে যাবেন সে কথা ভাবছিলেন ।তায়েফে যা কিছু ঘটেছে সে খবর হয়তো সেখানে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে । এখন তো কাফেররা আগের চেয়েও দুঃসাহসী হয়ে উঠবে । এই সময়ে একদিন রাতের বেলা যখন তিনি নামাযে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করছিলেন সেই সময় জিনদের একটি দল সেখানে এসে হাজির হলো । তারা কুরআন শুনলো, তার প্রতি ঈমান আনলো এবং ফিরে গিয়ে নিজ জাতির মধ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করলো । আল্লাহ তাঁর নবীকে এই সুসংবাদ দান করলেন যে, আপনার দাওয়াত শুনে মানুষ যদিও দূরে সরে যাচ্ছে, কিন্তু বহু জিন তার ভক্ত অনুরক্ত হয়ে পড়েছে এবং তারা একে স্বজাতির মধ্যে প্রচার করছে।

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

1 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি, 2021 "ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা
1 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি, 2021 "ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা
1 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি, 2021 "ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা
1 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি, 2021 "ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা
0 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি, 2021 "ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা
1 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি, 2021 "ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা
1 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি, 2021 "ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা
1 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি, 2021 "ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা
1 টি উত্তর
25 ফেব্রুয়ারি, 2021 "তাফসির" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তুষার
1 টি উত্তর
25 ফেব্রুয়ারি, 2021 "তাফসির" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তুষার
1 টি উত্তর
25 ফেব্রুয়ারি, 2021 "তাফসির" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তুষার
1 টি উত্তর
25 ফেব্রুয়ারি, 2021 "তাফসির" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তুষার
0 টি উত্তর
25 ফেব্রুয়ারি, 2021 "তাফসির" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তুষার
1 টি উত্তর
25 ফেব্রুয়ারি, 2021 "তাফসির" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তুষার
1 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি, 2021 "কুরআন ও হাদিস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা

34,035 টি প্রশ্ন

32,971 টি উত্তর

1,573 টি মন্তব্য

3,207 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
12 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 12 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 31658
গতকাল ভিজিট : 38324
সর্বমোট ভিজিট : 42311011
  1. MuntasirMahmud

    222 পয়েন্ট

    44 টি উত্তর

    2 টি গ্রশ্ন

  2. TeddyAhsan

    71 পয়েন্ট

    4 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

  3. TAKRIMISLAM

    68 পয়েন্ট

    0 টি উত্তর

    18 টি গ্রশ্ন

  4. Limon54

    65 পয়েন্ট

    12 টি উত্তর

    5 টি গ্রশ্ন

  5. Jara

    53 পয়েন্ট

    0 টি উত্তর

    3 টি গ্রশ্ন

এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
আজ বঙ্গাব্দ৷
...