ভগবান আর ঈশ্বর আলাদা জিনিস। এ বিষয়টা পরিস্কার ভাবে বুঝতে হলে ষড়দর্শন এবং উপনিষদ পড়লেই বোঝা যাবে।
➡️ ঈশ্বর ⬅️
যোগ দর্শনের ১ম পাদের ২৪তম সূত্রে মহর্ষি পতঞ্জলি বলেছেন “ক্লেশকর্মবিপাকাশয়ৈরপরামৃষ্টঃ পুরুষ বিশেষ ঈশ্বরঃ”
(যোগদর্শন-১/২৪)
অর্থাৎ “ক্লেশ, কর্ম, বিপাক ও আশয় এই চারটির সাথে যার কোন সম্বন্ধ নেই, যিনি জীব হতে ভিন্ন স্বভাবযুক্ত সেই চেতন পুরুষ বিশেষকে ‘ঈশ্বর’ বলা হয়।”
➡️ ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্যঃ ⬅️
১.তিনি “ক্লেশ” অর্থাৎ অবিদ্যা, অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ ও অভিনিবেশ এই পাঁচটি থেকে মুক্ত।
২.তিনি “কর্ম” অর্থাৎ শুভ-অশুভ-মিশ্র কর্ম হতে মুক্ত।
৩.তিনি “বিপাক” অর্থাৎ কর্মফল হতে মুক্ত।
৪.তিনি “আশয়” অর্থাৎ কর্মফল দ্বারা সৃষ্ট সুখ দুঃখ ভোগের সংস্কার হতে মুক্ত।
⏩ ভগবান ⏪
ভগবান শব্দের উৎপত্তিঃ “ভজ সেবায়াম্” এই ধাতু থেকে “ভগ” সিদ্ধ হয়, এর সাথে “মতুপ্” প্রত্যয় যোগে ভগবান শব্দটি সিদ্ধ হয়। তিনি সমগ্র ঐশ্বর্যযুক্ত অথবা ভজনের যোগ্য, এইজন্যে পরমেশ্বরের একটি গুণবাচক নাম হলো“ভগবান্”।
‘ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য’ এই ছয়টি গুণ থাকলেও তাকে ভগবান বলা যায়।
➡️এবার আসা যাক কোন মানুষকে ভগবান বলা যাবে কি নাঃ
“যিনি শাস্ত্রবিদ তথা ব্রহ্মবিদ্যায় পারদর্শী, সর্বদা বৈদিক ধর্মের আচরণকারী অর্থাৎ সদাচারী, অষ্টাঙ্গ যোগের অভ্যাসকারী যোগী এবং সর্বজীবে সমদর্শী এইরূপ তত্ত্বদর্শী মহাপুরুষকে অবশ্যই “ভগবান্” বলে সম্বোধন করা যাবে।
➡️এ সম্পর্কে কিছু শাস্ত্রীয় প্রমাণঃ
⏩প্রশ্ন উপনিষদের ১ম প্রশ্নের ১ম শ্লোকে আমরা দেখতে পাই, ভরদ্বাজ তনয় সুকেশা, শিবি পুত্র সত্যকাম, গর্গ গোত্রীয় সৌর্যায়ণি, অশ্বল তনয় কৌসল্য, ভৃঙ্গুবংশীয় বৈদর্ভি ও কত্য তনয় কবন্ধী, এরা সকলেই নিজেদের গুরু ঋষি পিপ্পলাদকে “ভগবান” বলে ডেকেছেন।
⏩মুণ্ডক উপনিষদের ১ম মুণ্ডকের ১ম খন্ডের ৩য় শ্লোকে গৃহস্থী শৌনক— ঋষি অঙ্গিরাকে “ভগবান” ডেকেছেন।
⏩তৈত্তিরীয় উপনিষদের ৩য় বল্লীর ১ম থেকে ৫ম শ্লোকের প্রতিটাতেই ভৃগু নামে প্রসিদ্ধ বরুণপুত্র, নিজের পিতা বরুণের সামনে উপস্থিত হয়ে তাঁর পিতাকে “ভগবান” বলে ডেকেছেন এবং বলেছেন যে “হে ভগবান, আমায় ব্রহ্মবিদ্যার উপদেশ করুন।”
⏩মনুস্মৃতির ১/২ শ্লোকেও দেখা যায় ঋষিগণ, রাজর্ষি মনুর নিকট যেয়ে তাঁকে “ভগবান” বলে সম্বোধন করে তাঁর কাছে বর্ণাশ্রম ও ধর্ম বিষয়ে জানার জন্য প্রশ্ন করেছেন।
➡️ অর্থাৎ ঈশ্বর মানেই হলো ভগবান, কিন্তু ভগবান মানেই ঈশ্বর নয়। ⬅️ পরমব্রহ্মকে ভগবান বলা যেতেই পারে (গুণবাচক নাম হিসেবে) কিন্তু ভগবান হলেই(যেমনঃ ব্রহ্মবিদ গুরু, পিতা ইত্যাদি) তাকে ব্রহ্ম জ্ঞানে উপাসনা করা অনুচিত।