751 বার দেখা হয়েছে
"হিন্দু ধর্ম" বিভাগে করেছেন

2 উত্তর

0 জনের পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
মূর্তিপূজা একটি সুপ্রাচীন উপাসনা পদ্ধতি। পৃথিবীর অন্য অনেক ধর্মতেই মূর্তির মাধ্যমে ঈশ্বর উপাসনা করা হয়। তবে তার সাথে সনাতন ধর্ম বিশ্বাসে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। প্রশ্ন কি লাভ এই পাথরের টুকরোর পূজা করে?? কী আছে ওতে?

আসুন জেনে নিই, হিন্দুরা কি ভাবে মূর্তির পূজা করে?

তবে মনে করি, মূর্তিপূজা সমন্ধে জানার আগে হিন্দু ধর্মের ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণাটা পরিষ্কার হওয়া দরকার।

সনাতন শাস্ত্রমতে, এক অনাদি অনন্ত সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর তিনটি রূপে সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে বিরাজমান।

●তিনি পরমব্রহ্ম রূপে সমগ্র সৃষ্টিতে বিরাজমান। এটিই তার নিরাকার স্বরূপ।

● তিনি পরমাত্মা রূপে প্রত্যেক জীবের অন্তরে বিরাজিত। এটি তার আত্মাস্বরূপ। এটিও নিরাকার।

● পরমেশ্বর স্বকীয় সত্ত্বায় নিজধামে বিরাজ করেন।এই যে সৃষ্টি , এটি তার লীলাস্থল। আমরা জীবেরা তার ইচ্ছাধীন। ইচ্ছাময় এই বিশাল বিশ্বনাট্যের সূত্রধর আপন মায়াশক্তিতে আবৃত থেকে আমাদের সকলের দৃষ্টির অগোচর হয়েছেন। ইহা তাঁর ভগবত্তার প্রকাশ। যা হোক, তিনি সাকার রূপে নিজ ধামে বাস করেন।

ভাবুন, যিনি সর্বশক্তিমান তার পক্ষে তো যেকোন কিছু করা সম্ভব। তিনি চাইলে সাকার আবার নিরাকার হতে পারেন। তিনি বিশ্বময় জীবের জন্য আলয় তৈরি করেছেন। তারও একটি নিজস্ব আলয় থাকাতো স্বাভাবিক ব্যাপার। তিনি আমাদের এতো কিছু দিয়েছেন। আবার আপন আনন্দ বিস্তারে বিশ্ব ময় লীলা করছেন। নিজ শক্তিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেবতারূপী সাকার সৃষ্টি করেছেন।

বেদে ঈশ্বর অব্যক্ত। আবার উপনিষদ এ বলা হয়েছে—

নমস্তে পরমং ব্রহ্ম

সর্বশক্তি মতে নমঃ

নিরাকার অপি সাকার

স্বেচ্ছারূপং নমো নমঃ

-সর্বশক্তিমান পরমব্রহ্মকে নমস্কার জানাই, যিনি নিরাকার এবং স্বেচ্ছায় সাকাররূপ ধারণ করেন।

ঈশ্বরের সাকার রূপের ধারণা থেকেই, তার অবয়ব তৈরির মাধ্যমে মূর্তিপূজার শুরু।

আচ্ছা, ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান ও সবর্ব্যাপি হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি কেন একটি মূর্তির মধ্যে থাকবেন না? তিনি তো সকল স্থানে সর্বদা বিরাজিত। তাঁর সর্বত্র উপস্থিত থাকবার ক্ষমতা রয়েছে। তাহলে তিনি মূর্তি মাঝেও বিদ্যমান। তাহলে মূর্তিপূজা করতে দোষ কোথায়?

ঈশ্বর যে সর্বত্রই বিরাজমান তার চমৎকার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন ভক্ত প্রহ্লাদ। তার পিতা হিরণ্যকশিপু বহু চেষ্টা করেও যখন ছেলের মুখ হতে হরিনাম সরাতে পারেননি তখন তাকে জিগ্যেস করেছিলেন, বল, কোথায় তোর হরি? প্রহ্লাদ উত্তরে বলে ছিলেন— তিনি তো সকল স্থানেই আছেন। আপনার সামনে যে স্তম্ভ আছে, ওতেও তিনি আছেন। এই শুনে ক্রোধে উম্মত হিরণ্যকশিপু তার হাতের গদাটি দিয়ে স্তম্ভে আঘাত করলেন। আর সাথে সাথেই ভক্তের ভগবান বিকট মূর্তি ধরে স্তম্ভ হতে বেরিয়ে এসে দুষ্ট হিরণ্যকশিপুকে বধ করলেন।

হিন্দু ঠিক ওটাকে মূর্তি ভেবে পূজা করে না। ভাবে তার উপাস্য তার সামনে এসেছে, তার অতিথি হয়ে তার সেবা গ্রহণ করতে। ভক্ত আপনার লোক ভেবেই ভগবানের সেবা করে । উৎকৃষ্ট ব্যঞ্জন রন্ধন করে, সুন্দর বস্ত্রালঙ্কারে তাঁকে সাজায়, সুন্দর করে তাকে বরণ করে আসন পেতে দেয়। চামর দিয়ে বাতাস করে।ঠিক যেন তার আপন লোক। হিন্দুরা একে বিগ্রহসেবা বলে। ঈশ্বর ওই মূর্তির মধ্যে বিরাজিত থেকে তাঁর ভক্তের সেবা গ্রহণ করেন। তাই তো, এর নাম বিগ্রহ।

এমনি এমনি যেকোন মূর্তিতে পূজা করা যায় না। তাঁর প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এর পর বিধি অনুযায়ী তাতে চক্ষুদান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়। এই রীতির মাধ্যমে ভক্ত তার প্রভু কে মূর্তি বা বিগ্রহের মধ্যে আবির্ভূত হতে আহ্বান জানায়।

যারা ভক্তিপথে ঈশ্বরের সেবা করেন, তারাই পটে বা মূর্তিতে ঈশ্বরের পূজা করেন।

আর যারা নিরাকারবাদ, তারা ধ্যানের মাধ্যমে ঈশ্বরের উপাসনা করেন।

সাকার নিরাকার দুটি পদ্ধতিই হিন্দু ধর্মে স্বীকৃত।

গীতাতে অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেসা করেছিলেন, যে সাকার ও নিরাকারের মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ট?

কৃষ্ণ তখন বলেছিলেন,

ক্লেশোহ্ধিকতরস্তেষামব্যক্ত আসক্তচেতসাম।

অব্যক্তা হি গতিরদুঃখং দেহবদ্ভিরবাপ্যতে।।

(গীতা-১২/৫)

—যাদের মন ভগবানের অব্যক্ত নির্বিশেষ রূপের প্রতি আসক্ত তাদের ক্লেশ অধিকতর।কারন অব্যক্তের উপাসনার ফলে দেহধারী জীবের কেবল দুঃখই লাভ হয়।

সাধারনের পক্ষে ধ্যানের মাধ্যমে ঈশ্বরের উপাসনা সম্ভব নয়। তাই বিগ্রহসেবা বিধিত হয়েছে।আমাদের পক্ষে কখনই ঈশ্বরের সবিশাল অসীমরূপকে কল্পনা করা সম্ভবপর নয়। তাই অসীমতাকে আমরা সসীমতায় রূপ দিয়েছি মূর্তির মাধ্যমে।

হিন্দুরা কখনই মূর্তিকে ঈশ্বর বলে মানে না। তা ঈশ্বরের প্রতীক মাত্র।

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের পরম প্রিয় শিষ্য নরেন্দ্র নাথ মানে স্বামী বিবেকানন্দও প্রথম জীবনে সাকার অবিশ্বাসী ছিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণের কৃপায় তিনি ঈশ্বরের সাকারতায় বিশ্বাসী হন।তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের মতোই কালীমায়ের দর্শন লাভ করেন।অতঃপর তিনি ভক্ত হয়ে যান।দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে স্বামী বিবেকানন্দের প্রার্থনা - উইকিপিডিয়া

এরপরে তিনি একবার রাজপুতানার আলোয়ারের রাজার সাথে দেখা করেন।

রাজা ব্রিটিশদের সাথে মেলামেশা করতেন। তাই তিনি পশ্চিমী ভাবধারায় বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। মুর্তিপূজাতে তারও প্রচন্ড অবিশ্বাস ছিল।

তিনি নানাভাবে স্বামীজীর সাথে এ বিষয়ে বাক-বিতণ্ডা করছিলেন।এক পর্যায়ে স্বামীজী দেওয়ানকে দিয়ে রাজার একখানা তৈলচিত্র আনালেন এবং দেওয়ানকে থুথু দিতে বললেন।রাজা এবার ভীষণ চোটে গেলেন।

স্বামীজী বললেন, ওতো শুধু কাগজ আর কালি। আপনি তো নন। এতে এতো রাগবার কি আছে?

দেওয়ান বললেন, ওটা রাজার ছবি। ওতে কি থুথু ফেলা যায়।

স্বামীজী ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন, ওই কাগজ কালিতে যেমন আপনার রাজামশাইয়ের কথা মনে হয়, তেমনি পুজো করার সময় পূজারী তার আরাধ্যকেই দেখে, পাথরের মূর্তিকে নয়।

রাজা তার ভুল ভালো করেই বুঝতে পারলেন।

স্বামীজী পরে খুব সুন্দর একটি কথা বলেছিলেন,

(আমার খুব প্রিয় কথাটা)

"পুতুল পূজা করে না হিন্দু,

কাঠ -মাটি দিয়ে গড়া।

মৃন্ময়ী মাঝে চিন্ময়ী হেরে

হয়ে যাই আত্মহারা।"

এ ধরণের প্রশ্ন শুনলে, আমি আরো একটা কাহিনী বলতে পছন্দ করি ।

শ্রীরামানুচার্য দক্ষিণ ভারতের শ্রী সম্প্রদায়ের একজন বিখ্যাত পন্ডিত।

তিনি প্রত্যহ বিগ্রহের সেবা করতেন।

একবার তার সাথে এক অবিশ্বাসী ব্যক্তির দেখা হয়।

তিনি বললেন, আপনি মহাজ্ঞানী। জানেন তো , ব্রহ্ম সর্বব্যাপী। তাহলে তার জন্যে, এই পিতলের মূর্তির সেবা কেন?

রামানুজ বললেন, ওতো বুঝি না, বাপু। আমার সময় নেই। বিগ্রহ সেবার ধূপ ধুনো জ্বালতে আমার আগুন দরকার। পারলে একটু আগুন নিয়ে আসুন দেখি।

লোকটি কাছের গ্রামে গেলেন। তারপর একটা শুকনো কাঠে আগুন ধরিয়ে নিয়ে এলেন।

তারপর রামানুজকে সেই জ্বলন্ত কাঠ দিলেন।

রামানুজ বললেন, আপনাকে বলা হয়েছিল শুধু আগুন আনতে। আপনি কাঠ আনলেন কেন?

লোকটি বললো, কাঠ ছাড়া যে অগ্নি বহনের কোন উপায় দেখি না।

রামানুজ জানালেন, আমিও তেমন পরম ব্রহ্মকে আমার দুয়ারে আনতে পিতলের মূর্তি ছাড়া অন্য উপায় দেখি না। আপনার কাঠটি আগে শুধুই শুকনো কাঠ ছিল, এখন অগ্নি হয়ে উঠেছে। আর আমার ঠাকুরও একসময় পেতল ছিলো, এক্ষণে চিন্ময় ব্রহ্ম হয়ে উঠেছেন। এটাই এখন তাঁর সচ্চিদানন্দময় বিগ্রহ।নারায়ণ যেমন অযোধ্যায় এসেছিলেন রাম রূপে, তিনি আজ আমার কুটিরে এসেছেন অর্চাবতার রূপে।

(অর্চ্চাবতার- যখন ভক্তের অর্চনা গ্রহণ এর জন্য ভগবান কোন বিগ্রহে আবির্ভুত হন)

আচার্যের উক্তিটি জিজ্ঞাসু ব্যক্তিটির সকল সংশয় দূর করলো।

আসলে ভক্ত বিগ্রহ এর মাধ্যমে তার ইষ্টের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। এর মাধ্যমে সে তার সকল কথা ঈশ্বরকে জানায়। আসলে মূর্তিটি কিছুই নয়।আসল ভাব তার মন। মনের পবিত্রতা তার সেবিত বিগ্রহে ব্রহ্মত্ব আরোপ করে। আর ঈশ্বর সর্বব্যাপী। তিনি সব ভাবেই ভক্তের সেবা নিতে পারেন। ভক্ত যেভাবে চাইছে, ভগবান ঠিক সেভাবে তার সামনে আবির্ভুত হন।

তাই মুর্তিপূজাকে ছোট করে দেখবার কারণ নেই।

(কোরা থেকে সংগৃহীত )
করেছেন
আপনাকে আমি একটি লাইক দিতেছি ।
0 জনের পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
হিন্দুধর্মে মূর্তিপূজা সম্পর্কে ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, না তাস্তি পাতিমা আস্তি।  অর্থ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোনো মূর্তি বা প্রতিকৃতি নেই (যযুরবেদ, ৩২নং অধ্যায়ের ৩নং অনুচ্ছেদ)

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

1 টি উত্তর
0 টি উত্তর
1 টি উত্তর
1 টি উত্তর
5 মার্চ, 2021 "হিন্দু ধর্ম" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন তানহা
2 টি উত্তর
14 ডিসেম্বর, 2019 "হিন্দু ধর্ম" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন ওয়াহিদ
1 টি উত্তর
14 ডিসেম্বর, 2019 "হিন্দু ধর্ম" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন ওয়াহিদ
2 টি উত্তর
14 ডিসেম্বর, 2019 "হিন্দু ধর্ম" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন ওয়াহিদ

33,895 টি প্রশ্ন

32,834 টি উত্তর

1,567 টি মন্তব্য

3,186 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
38 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 38 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 2924
গতকাল ভিজিট : 35871
সর্বমোট ভিজিট : 41581586
  1. MuntasirMahmud

    763 পয়েন্ট

    150 টি উত্তর

    8 টি গ্রশ্ন

  2. Limon54

    381 পয়েন্ট

    64 টি উত্তর

    61 টি গ্রশ্ন

  3. Rahmat

    275 পয়েন্ট

    35 টি উত্তর

    50 টি গ্রশ্ন

  4. Kuddus

    81 পয়েন্ট

    16 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

  5. Mdmasud999

    56 পয়েন্ট

    1 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
আজ বঙ্গাব্দ৷
...