হরমোন হল জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রজনন কার্যক্রমে হরমোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হরমোনগুলি প্রজনন অঙ্গ ও তন্ত্রগুলির বৃদ্ধি, বিকাশ, পরিপক্কতা এবং কার্যক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পুরুষের প্রজনন কার্যক্রমে হরমোনের ভূমিকা
পুরুষের প্রজনন কার্যক্রমে প্রধান হরমোন হল টেস্টোস্টেরন। টেস্টোস্টেরন শুক্রাশয় থেকে নিঃসৃত হয়। এটি শুক্রাণুর উৎপাদন,শুক্রাশয়ের বৃদ্ধি ও বিকাশ, যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ও বিকাশ, পুরুষালি বৈশিষ্ট্যগুলির বিকাশ এবং যৌন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
নারীর প্রজনন কার্যক্রমে হরমোনের ভূমিকা
নারীর প্রজনন কার্যক্রমে প্রধান হরমোন হল ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন। ইস্ট্রোজেন ওভারি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি ডিম্বাশয়ের বৃদ্ধি ও বিকাশ, জরায়ুর বৃদ্ধি ও বিকাশ, স্তনের বৃদ্ধি ও বিকাশ, মাসিক চক্রের নিয়ন্ত্রণ এবং যৌন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রোজেস্টেরন ওভারি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি জরায়ুর আবরণের বৃদ্ধি ও বিকাশ, গর্ভাবস্থার প্রস্তুতি এবং গর্ভধারণের সময় জরায়ুর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রজনন কার্যক্রমে অন্যান্য হরমোনের ভূমিকা
প্রজনন কার্যক্রমে অন্যান্য হরমোনগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন:
-
গ্লান্ডোট্রপিন হরমোন (GnRH) পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি ওভারি এবং টেস্টোস্টেরন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে।
-
লুটেইনাইজিং হরমোন (LH) পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণুর নিঃসরণ এবং প্রোজেস্টেরন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে।
-
ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি ডিম্বাশয়ে ফলিকলের বৃদ্ধি ও বিকাশকে উদ্দীপিত করে।
-
প্রোল্যাকটিন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি স্তনের দুধ উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা প্রজনন কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে। যেমন, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যেতে পারে এবং শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে নারীদের মাসিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।