প্রস্তরাঘাতে জেনাকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে বর্বরতা মনে হওয়ার কারণ হলো এটি মানবাধিকারের মৌলিক নীতির বিপরীতে, এবং একটি অত্যন্ত নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক শাস্তি। এর কিছু প্রধান কারণ নিম্নরূপ:
1. অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও নিষ্ঠুর: প্রস্তরাঘাত একটি অত্যন্ত অমানবিক এবং দীর্ঘস্থায়ী মৃত্যু। এটি শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে, কারণ শাস্তি দেওয়ার সময় মৃত ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পৌঁছায়, এবং মৃতদেহ সঙ্কুচিত হতে থাকে। এতে মৃত্যুর আগে অনেকটা সময় ধরে যন্ত্রণা সইতে হয়।
2. মানবাধিকারের লঙ্ঘন: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, একটি মানুষের জীবনকে হরণ করার আগে তার মৌলিক অধিকার, যেমন সঠিক বিচার এবং সহানুভূতির অধিকার, নিশ্চিত করা উচিত। প্রস্তরাঘাতের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা মানবাধিকারের প্রতি অসন্মান প্রদর্শন করে, কারণ এটি সঠিক বিচার ছাড়াই কেবল শাস্তি দেওয়া হয় এবং অপরাধীকে মৌলিক সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয়।
3. অসহনীয় শাস্তি: মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ ধরনের পদ্ধতি সাধারণত একটি সমাজের নৈতিকতার বিরুদ্ধে কাজ করে। যেখানে সমাজে মানবিকতা এবং সহানুভূতির মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এমন এক শাস্তি যেন একটি মানুষের দেহ ও আত্মাকে আঘাত করার মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
4. অনেক সময় সঠিক অপরাধী চিহ্নিত করা সম্ভব নয়: প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা অনেক সময় বিচার ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে ভুলভাবে নির্দোষ মানুষকেও শাস্তি দেওয়া হতে পারে। সঠিক বিচার না হলে নির্দোষ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে, যা একটি সভ্য সমাজের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
5. সভ্যতার অগ্রগতি: সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানবাধিকার, মানবিক মূল্যবোধ এবং শান্তির প্রতি শ্রদ্ধার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রস্তরাঘাতের মতো বর্বর শাস্তি প্রাচীনকালে প্রচলিত ছিল, তবে আধুনিক সভ্য সমাজে এটি সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সভ্য সমাজে শাস্তির পদ্ধতি যেন ন্যায়সঙ্গত এবং মানবিক হয়, এবং এটি কখনোই এ ধরনের নিষ্ঠুর পদ্ধতি হতে পারে না।
এই কারণে, প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে অনেকেই বর্বরতা মনে করেন, কারণ এটি মানুষকে সঠিক ও মানবিকভাবে শাস্তি দেওয়ার আদর্শের বিপরীতে।