শরীরের মাংসপেশি হঠাৎ লাফিয়ে ওঠার অনুভূতি বা "মাসল টুইচিং" (Muscle Twitching) একটি সাধারণ শারীরিক প্রতিক্রিয়া। এটি সাধারণত মাংসপেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন বা স্প্যামের কারণে ঘটে। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যা গুরুতর না হলেও কখনো কখনো চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
নিচে এই প্রতিক্রিয়ার কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:
১. স্নায়ুতন্ত্রের অতিরিক্ত উদ্দীপনা
-
মাংসপেশি সংকোচন এবং শিথিল হওয়া আমাদের স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে।
-
যখন কোনো স্নায়ু অস্বাভাবিকভাবে উদ্দীপ্ত হয়, তখন সংশ্লিষ্ট মাংসপেশি অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে পারে, যা টুইচিংয়ের কারণ।
২. স্ট্রেস এবং উদ্বেগ
-
মানসিক চাপ বা উদ্বেগ শরীরে অতিরিক্ত অ্যাড্রিনালিন তৈরি করে।
-
অ্যাড্রিনালিন স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে, যার ফলে মাংসপেশি টুইচিং দেখা দিতে পারে।
৩. ক্লান্তি বা অতিরিক্ত পরিশ্রম
-
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের পর মাংসপেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং টুইচ করতে পারে।
-
পেশিগুলোর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার সময় এই সংকোচন ঘটে।
৪. ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যের অভাব
-
শরীরে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে মাংসপেশি টুইচিং হতে পারে।
-
এই খনিজ পদার্থগুলো মাংসপেশি সংকোচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ডিহাইড্রেশন (পানি শূন্যতা)
-
শরীরে পানি কমে গেলে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা স্নায়ু এবং মাংসপেশিকে প্রভাবিত করে।
-
ফলে মাংসপেশি টুইচিং দেখা দিতে পারে।
৬. ক্যাফেইন বা অতিরিক্ত উদ্দীপক গ্রহণ
-
চা, কফি বা অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় অতিরিক্ত গ্রহণ করলে স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজিত হয়।
-
এটি মাংসপেশি টুইচিংয়ের কারণ হতে পারে।
৭. ঘুমের অভাব
-
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে।
-
এর ফলে মাংসপেশি অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হতে পারে।
৮. ছোটখাটো আঘাত বা চাপে থাকা স্নায়ু
-
দীর্ঘ সময় এক অবস্থানে বসে থাকা বা শুয়ে থাকলে কোনো স্নায়ু চাপে পড়তে পারে।
-
এতে সংশ্লিষ্ট মাংসপেশি টুইচিং হতে পারে।
৯. নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা
কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক বা স্বাস্থ্যগত কারণেও মাংসপেশি লাফিয়ে উঠতে পারে:
-
বহিঃস্নায়ুর সমস্যা (Peripheral Neuropathy): স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে।
-
মোটর নিউরন ডিজিজ (Motor Neuron Disease): যেমন ALS (Amyotrophic Lateral Sclerosis)।
-
মায়োথোনিয়া (Myotonia): মাংসপেশি শিথিল হতে না পারলে।
১০. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
-
কিছু ওষুধ, বিশেষ করে ডায়ুরেটিকস, স্টেরয়েড, এবং ক্যালসিয়াম ব্লকার, মাংসপেশি টুইচিং ঘটাতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন?
মাংসপেশির টুইচিং যদি নিচের লক্ষণগুলোর সাথে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
-
টুইচিং দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে।
-
শরীরের অন্যান্য অংশ দুর্বল বা অবশ হয়ে পড়ে।
-
ব্যথা বা অন্যান্য অস্বাভাবিক উপসর্গ থাকে।
-
দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয়।
করণীয়
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং সুষম খাবার খান।
-
স্ট্রেস কমানোর জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন।
-
ঘুমের অভ্যাস ঠিক করুন।
-
অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা এলকোহল গ্রহণ এড়িয়ে চলুন।
-
যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মাংসপেশির হঠাৎ টুইচিং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তেমন গুরুতর নয়, তবে যদি এটি ঘন ঘন ঘটে এবং অন্যান্য সমস্যা তৈরি করে, তাহলে এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়।