গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ক্যালরির প্রয়োজন হয়, তাই স্বাভাবিক সময়ের থেকে তাকে বেশি পরিমাণে খেতে হয়।
পবিত্র রমজান মাসে যেহেতু দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়, তাই এ সময়ে গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখা না রাখা নিয়ে বেশ দ্বিধায় পড়ে যান। একদিকে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ, অপরদিকে সারা দিন অভুক্ত থাকলে গর্ভস্থ শিশু সঠিক পুষ্টি পাবে কি না, সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তা! যদিও ইসলামি নিয়মানুসারে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের রোজা রাখার ওপর শিথিলতার কথা উল্লেখ আছে। তাই গর্ভকালীন অবস্থায় রোজা রাখা অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর। গর্ভাবস্থায় যদি আপনি সুস্থ-স্বাভাবিক থাকেন ও আপনার গর্ভস্থ শিশুর কোন ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকে তাহলে আপনার রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। তবে বেবির কথা চিন্তা করে আপনি রোজা কাজাও করতে পারেন।
গর্ভকালীন সময়কে আমরা তিনটি ট্রাইমেস্টারে ভাগ করে থাকি। প্রথম তিন মাস বেশ জটিল। এ সময়ে মাতৃগর্ভে শিশুর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়। তাই মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রায় পুষ্টি, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড, পানির সরবরাহ জরুরি। তা ছাড়া এ সময়ে বমি বমি ভাব, বমি, খাদ্যে অরুচি, মাথাব্যথা, ওজন কমে যাওয়াসহ কিছু কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই প্রথম তিন মাসে রোজা না রাখাই ভালো।
মধ্যবর্তী তিন মাসে গর্ভের শিশুর গঠন তৈরি হয়ে যায়। গর্ভবতী মা এ সময় অপেক্ষাকৃত ভালো বোধ করেন। মা ও গর্ভস্থ শিশুর যদি অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকে এবং মায়ের ওজন ঠিক থাকে, তাহলে এ তিন মাসে তার রোজা রাখায় কোনো বাধা নেই। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রথম তিন মাসের মতো শেষ তিন মাসও গর্ভবতী মাকে অধিক সতর্ক থাকতে হয়। এ সময়ে গর্ভের শিশুটি দ্রুত বেড়ে ওঠে। তাই এ সময়ে মা ও গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টির বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি রোজা রাখতে চান, তাহলে রোজা শুরুর আগেই আপনার গাইনকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন।
আপনি যদি রোজা পালন করেন তাহলে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।
* রোজার ক্লান্তি কমাতে বিশ্রামের মাত্রা বাড়িয়ে দিন।
* দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন।
* অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি এবং পরিশ্রম করবেন না।
* ভারী ওজন বহন করবেন না।
* রাত জাগার অভ্যাস পরিহার করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
* পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
* ইফতারি ও সেহরিতে সুষম খাবার নিশ্চিত করুন।