বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ "স্পুটনিক-১" সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) কর্তৃক উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর কাজাখস্তানের বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে উৎক্ষেপিত হয়, যা মানব সভ্যতার মহাকাশ জয় অভিযানের প্রথম সফল পদক্ষেপ ছিল। ৮৩.৬ কিলোগ্রাম ওজনের এবং ৫৮ সেন্টিমিটার ব্যাসের গোলাকার এই উপগ্রহটি পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায় এবং নির্দিষ্ট রেডিও সংকেত প্রেরণ করে, যা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞানীরা গ্রহণ করেন।
স্পুটনিক-১-এর উৎক্ষেপণ সারা বিশ্বে এক যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি এক নতুন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত যুগের সূচনা করে এবং মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক এক পর্বের ভিত্তি স্থাপন করে, যা ইতিহাসে "স্পেস রেস" নামে পরিচিত। মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে ফেলে এবং মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে।
স্পুটনিক-১ পৃথিবী থেকে ৯৩২ মাইল সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছায় এবং প্রতি ৯৬.২ মিনিটে একবার করে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। এটি ২০,০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা বেগে চলত এবং ২১ দিন ধরে রেডিও সংকেত প্রেরণ করত, যা পৃথিবীতে শোনা যেত। ১৯৫৮ সালের ৪ জানুয়ারি, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশের সময় এটি ধ্বংস হয়ে যায়।
স্পুটনিক-১-এর সাফল্যের ফলে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় বিপ্লব ঘটে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ গবেষণায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ সালে ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) প্রতিষ্ঠিত হয়। স্পুটনিক যুগের সূচনা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং সামরিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব ফেলে।
সংক্ষেপে, স্পুটনিক-১ শুধুমাত্র প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ নয়; এটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির একটি প্রতীক, যা মহাকাশ গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং মানুষকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর জগৎ সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করে।