শয়তান আত-তাক্ব মুহাম্মদ ইবনে নোমান বাহমীতের উপাধী। তিনি ছিলেন ইমাম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সম-সাময়িক ব্যক্তিত্ব। তিনি জাহমিয়া সম্প্রদায়ের মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
জাহমিয়া সম্প্রদায়ের কিছু মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসঃ-
১. আল্লাহ তা'আলাকে এমন কোন গুণে গুণান্বিত করা জায়েয নয় যে গুণ কোন মানুষের উপর প্রযোজ্য হতে পারে। কেননা এতে আল্লাহকে মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য বিধান করা হয়, অথচ আল্লাহ কোন মাখলুকের মত নন। এ কারণেই তারা আল্লাহর জীবিত হওয়া, জ্ঞানী হওয়া, ইচ্ছা পোষণকারী হওয়া প্রভৃতি গুণাবলীকে রদ করে থাকে। তবে আল্লাহর শক্তিশালী হওয়া, স্রষ্টা হওয়া, অস্তিত্বদানকারী হওয়া, জীবন দানকারী হওয়া এবং মৃত্যু দানকারী হওয়াকে তারা স্বীকার করে। যেহেতু এসব গুণাবলী কোন মাখলুকের উপর প্রযোজ্য হয় না।
২. মু'তাযিলা ও কাদরিয়া-এর ন্যায় তারা আল্লাহর কালামকে মাখলুক তথা নশ্বর সৃষ্টি মনে করে। (আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আকীদা হল- আল্লাহর কালাম কুরআন মাখলুক বা নশ্বর সৃষ্টি নয় বরং তা গায়রে মাখলুক তথা অবিনশ্বর।)
৩. জাববিয়্যাহ ফিরকার ন্যায় তারা মনে করে যে, মানুষ নিতান্তই মাজবূর। অর্থাৎ, কোন শক্তি, কোন ইরাদা, কোন এখতিয়ার তার নেই। মানুষ অমুক কাজ করে, অমুক কাজ করে এভাবে মানুষের প্রতি যে সব ক্রিয়াকে সম্পৃক্ত করা হয় তা রূপক অর্থেই করা হয়ে থাকে। যেমনঃ- গাছের ফল দেয়া, পানির প্রবাহিত হওয়া, সূর্যের উদিত অস্তমিত হওয়া, পাথরের নড়া প্রভৃতি ক্রিয়াগুলিকে রূপক অর্থেই সম্পৃক্ত করা হয়ে থাকে। ( মরমী বাউল সাধক লালন ফকিরের একই মতাদর্শ ছিলো, তাঁর একটা গানই এমন যে - যেমনে নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ! এটা সম্পূর্ণই সঠিক ইসলামী আকীদা বিশ্বাসের বিপরীত এবং সাংঘর্ষিক।)
( অথচ এ ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আকীদা হল মানুষ সম্পূর্ণ মাজবূর নয়, আবার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতার অধিকারীও নয়। এতদুভয়ের মাঝেই হলো ইসলামের অবস্থান। সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ মাজবূর, তবে কর্মের ক্ষেত্রে তার এখতিয়ারের ব্যাপার রয়েছে। বান্দার কোনো ইরাদা হতে পারে না, যদি আল্লাহর ইরাদা না হয়।)
৪. জান্নাতে জান্নাতীদের উপভোগ সম্পন্ন হওয়ার পর এবং জাহান্নামে জাহান্নামীদের দূর্ভোগ পোহানো সম্পন্ন হওয়ার পর জান্নাত জাহান্নাম ধ্বংস হয়ে যাবে। জান্নাত জাহান্নাম চিরস্থায়ী নয়। কুরআনে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের চিরস্থায়ী হওয়ার যে বর্ণনা রয়েছে সেগুলোকে তারা তাকিদ ও মুবালাগা অর্থে গ্রহণ করেছে।
(এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আকীদা হল- জান্নাত জাহান্নাম এমন দুটো সৃষ্টি যা অনন্তকাল থাকবে, কখনও ধ্বংস হবে না।)
৫.ঈমান হল অন্তরের বিষয়, মুখের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। অতএব কারও অন্তরে যদি ঈমান (অর্থাৎ, আল্লাহ্ ও তার রাসূল সম্পর্কে জানাশোনা থাকে) আর মুখে সে অস্বীকার করে, তাহলে সে মু'মিনই থাকবে, কাফের হয়ে যাবে না। কারণ ঈমান বলা হয় (আল্লাহর সাথে) পরিচয় থাকাকে আর কুফর বলা হয় (আল্লাহর সাথে) পরিচয় না থাকাকে।
৬. ঈমানের মধ্যে কোন বিভক্তি নেই। অর্থাৎ, অন্তরের বিশ্বাস, মুখের স্বীকৃতি ও আমল এই তিন ভাগে ঈমান বিভক্ত নয়। অতএর ঈমানদারদের ঈমানের মধ্যে কোন মানগত উঁচু নিচুর পার্থক্য নেই। নবীদের ঈমান এবং উম্মতের ঈমানের মধ্যে কোন মানগত পার্থক্য নেই। সকলের ঈমানই একই মানের। কারণ ঈমান বলা হয় (আল্লাহর) পরিচয়কে আর পরিচয়ের মধ্যে এমন কোন মানগত পার্থক্য ঘটে না।
৭. মু'তাযিলাদের ন্যায় তারাও মনে করে পরকালে আল্লাহর দীদার হবে না। (আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আকীদা হল জান্নাতীদের আল্লাহর দীদার নসীব হবে।)
৮. তারা মালাকুল মাউত-কে অস্বীকার করে। তাদের মতে রূহ্ সরাসরি আল্লাহ কবজ করেন । মালাকুল মউত-এর সাথে এর সম্পর্ক নেই। এমনিভাবে তারা আলমে বারযাখ, কবরে মুনকার নাকীরের সওয়াল ও হাউজে কাউছার এর বিষয়গুলিকেও অস্বীকার করে। তাদের মতে এগুলো কল্পিত বিষয়।
(আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতে জগৎ সমূহের রূহ কবজ করার দায়িত্বে রয়েছেন মালাকুল মউত। তারা কবরে আযাব/আরাম, রব, নবী ও দ্বীন সম্পর্কে মুনকার নাকীরের সওয়াল, হাউয়ে কাউছার - এসব বিষয়ে বিশ্বাস রাখে।)
ইত্যাদি।