প্রশ্নটা অবান্তর নয় কি!
প্রথমত কথা হলো - যিনি সাহাবী হবেন তিনি অবশ্যই মুসলমান হবেন। যিনি ঈমানের অবস্থায় আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছেন এবং ঈমানের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন তিনিই সাহাবী। সুতরাং তিনি তো মুসলমানই! সুতরাং "কোন্ সাহাবী মুসলমান হয়েও" কথাটা কেমন হলো? আপনিই বিচার করেন।
দ্বিতীয় কথা হলো - কোন মুনাফিক মুসলমান নয়। বিশেষ করে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগের কোন মুনাফিককে, যাদের মুনাফেকি দিবালকের ন্যায় সুস্পষ্ট, সুবিদিত ও আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের মুনাফেকীর কথা ওহীর মারফত জেনেছিলেন তাদের তো মুসলমান বলার কোন সুযোগই নেই। সে তো মুসলমানই না! মুনাফিক! তার তো ঈমানই নেই। তাহলে সে সাহাবী হবে কিভাবে? আর সাহাবীই যদি হন, তবে তো তিনি খাঁটি মুসলমান! মুসলমান বলেই তো তিনি সাহাবী। ঈমানের অবস্থায় আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছেন এবং ঈমানের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এই জন্যই তো তিনি সাহাবী!
ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, যারা আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের পর মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলো, তারা তো মুসলমানই না, কাফির, মুরতাদ। সাহাবী হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
সুতরাং একই ব্যক্তিকে সাহাবী - মুসলমান - মুনাফিক উপাধায়ে ভূষিত করার কোন সুযোগই নেই। প্রশ্নটাই মূলত অবান্তর।
( আপনাকে বলছি না, আবার মাইন্ড করবেন না) -
অনেকেই হজরত হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে হজরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার ইফকের ঘটনায় "মুনাফিক" হিসেবে আখ্যা দিতে চায় বা দেয়। নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক। তিনি যদি মুনাফিকই হন তবে তিনি আবার সাহাবী হন কিভাবে? তিনি মুনাফিকদের প্ররোচনায় পড়ে গিয়ে ভুল করে ফেলেছিলেন! এরকম ভুল তিনিসহ আরেকজন ছিলেন, যাঁকে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু প্রতি মাসে কিছু হাদিয়া দিতেন। এই ঘটনায় হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু সেই হাদীয়া দেয়া বন্ধ করে দেয়ার কসম করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আয়াত নাজিলের মাধ্যমে যখন হজরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার পবিত্রতা সবার সামনে প্রকাশ পায় তখন হজরত হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু সহ সেই সাহাবী বা আরও যারা মুনাফিকদের প্ররোচনায় পড়ে গিয়েছিলেন, তারা তওবা করেন। তাদের তওবা আল্লাহ্ পাক কবুলও করেন। তাদের তওবা কবুল হওয়ার পর ওই যে আরেক সাহাবী, যাকে হাদীয়া দেয়া বন্ধ করে দেয়ার কসম করেছিলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু, তিনি কেন দান করা বন্ধ করে দেয়ার কসম করলেন, এ সম্পর্কেও আয়াত নাজিল হয়। তখন হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু কসমের কাফফারা আদায় করে উক্ত সাহাবীকে পুনরায় প্রতিমাসে হাদীয়া দেয়া শুরু করলেন।
এখন কথা হলো - আল্লাহ্ পাক যাঁদেরকে ক্ষমা করে দিলেন, আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাঁদেরকে ক্ষমা করে দিলেন, সাহাবীরা যাঁদেরকে ক্ষমা করে দিলেন - আমরা এই যুগে এসে ওই সকল সাহাবীদের দোষ নতুন করে খুঁজে বের করছি, মুনাফিক বলছি।
আফসোস আফসোস।