এ কথার উত্তর হলো, এই কুরআন মাজীদই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ আসল ও আদি সেই কুরআন মাজীদ। এর অনেক প্রমান রয়েছে। এখানে কয়েকটি সহজ প্রমাণ বর্ণনা করছি।
♦ প্রথম প্রমাণঃ-
কুরআন মাজীদের "মুতাওয়াতির হওয়া" অর্থাৎ, একাধারে ধারাবাহিকভাবে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল থেকে আজ পর্যন্ত চলে আসতে থাকা। (যে জিনিস "তাওয়াতুর" বা ধারাবাহিকতার সাথে প্রমাণিত হয়ে যায়, তার প্রমান অকাট্য ও নিশ্চিত বলে বিবেচিত হয়।) তাতে কোনো রকম সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ থাকে না।
এখন আমরা জানবো "মুতাওয়াতির" এবং "তাওয়াতুর" অর্থ কি?
এর উত্তর এই- যে বিষয়ের বর্ণনাকারী এত অধিক সংখ্যক হয় যে, তাদের সবার পক্ষে মিথ্যা বলা বিবেকের কাছে অসম্ভব, সে বিষয়কে "মুতাওয়াতির" বলা হয়। আর বিষয়টির এভাবে বর্ণিত হয়ে চলে আসাকে "তাওয়াতুর" বলে।
সুতরাং কুরআন মাজীদকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কাল থেকে এত অধিক পরিমাণ লোক বর্ণনা করে এবং নিজে শিখে ও অপরকে শিখিয়ে আসছে যে, সাধারণ বুদ্ধির কোন লোকও এ কথা বিশ্বাস করতে পারে না যে, এত বিপুল সংখ্যক লোক সবাই মিথ্যা বলবে।
♦ দ্বিতীয় প্রমাণঃ-
হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ, বরং কোটি কোটি মুসলমান কুরআন মাজীদের হাফিজ হয়ে চলে আসছেন এবং আজও পৃথিবীতে মুসলমানদের লক্ষ লক্ষ শিশু, কিশোর, যুবক, বুড়ো রয়েছেন, যাঁদের বুকে কুরআন মাজীদ সংরক্ষিত। আর যে গ্রন্থের অবতরণকাল থেকে আজ পর্যন্ত এত হাফিজ বিদ্যমান এবং তাঁরা নিজের বুকে তা সংরক্ষন করেছেন তার সংরক্ষিত থাকা এবং এর আসল ও নির্ভেজাল হওয়ার ব্যাপারে কি সন্দেহ হতে পারে!
♦ তৃতীয় প্রমাণঃ-
স্বয়ং কুরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন -
اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ
অর্থাৎ "অবশ্যই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার হেফাযত করবো।" সুতরাং যখন স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা কুরআন মাজীদের হেফাজত নিজ দায়িত্বে নিয়ে নিলেন এবং তার হেফাজতের অঙ্গীকার করেছেন তখন অত্যাবশ্যকভাবেই প্রমাণিত হয়ে গেল যে, এ কুরআন মাজীদই হুবহু সেই কুরআন মাজীদ, যা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল। কেননা এর হেফাজতের ওয়াদা স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা করেছিলেন। কাজেই তা আজও "মাহফুজ" বা সংরক্ষিত রয়েছে। ইংশা আল্লাহ্ কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে।
♦ চতুর্থ প্রমাণঃ-
কুরআন মাজীদ নিজের অবতরণকালে যে দাবি করেছিল যে, এর মত কোন কালাম বা বাণী কোন লোকই তৈরি করতে পারবে না, সে দাবী আজও পর্যন্ত এ কুরআন মাজীদ সম্পর্কে সঠিক রয়েছে। কেননা যে কুরআন মাজীদখানি আজও বিদ্যমান, তার অনুরূপ না কেউ তৈরি করতে পেরেছে, না কেউ এমন দাবী করেছে, না তৈরি করতে পারে, না পারবে। সুতরাং এটা এ কথার প্রকাশ্য প্রমাণ যে, এই কুরআনই হলো সেই মূল কুরআন, যা হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর আজ থেকে ১৪ শত বছর পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল।