বনজ সম্পদের গুরুত্ব
বনজ সম্পদ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রসারিত করেছে। এ দেশে বনজ সম্পদের অবদান মোট জাতীয় উৎপাদনের শতকরা প্রায় ৫ ভাগ। নিচে বনজসম্পদের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
কৃষিক্ষেত্রঃ-
কৃষির উন্নয়নে বনজ সম্পদ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বনভূমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, মাটির ক্ষয় রোধ করে, বন্যা ও প্লাবন হতে ভূমিকে রক্ষা করে গাছের পাতা পচে ভূমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি পায়।
শিল্পক্ষেত্রঃ-
বাংলাদেশে শিল্পের উন্নতির ক্ষেত্রে বনজ সম্পদ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। কাগজ, নিউজপ্রিন্ট, দিয়াশলাই, রেয়ন, প্লাইউড, ফাইবার বাের্ড, রবার এবং খেলার সরঞ্জাম তৈরির উপকরণ হিসেবে বনজ সম্পদ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এসিড, স্পিরিট, আলকাতরা, প্যাকিং বক্স, বারুদ প্রভৃতি প্রস্তুত করতে বনভূমির গাছপালা প্রয়োজন হয়। উল্লেখ্য কুটির শিল্পের কাঁচামালের অধিকাংশই বনজ সম্পদের অন্তর্গত।
পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রঃ-
পরিবহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বনজ সম্পদের ভূমিকা রয়েছে। বৈদুতিক লাইনের খুটি, রেল লাইনের স্লিপার, নৌকা, স্টীমার, লঞ্চ, ট্রাক ও গাড়ির বডি প্রভৃতি প্রস্তুত করতে বনভূমি হতে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। ঘর-বাড়ি ও আসবাবপত্র নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ ও বসবাসের জন্য বিভিন্ন রকম ঘর বাড়ি ও আসবাবপত্র তৈরি করতে বনজ সম্পদের প্রয়োজন হয়।
সরকারের আয়ের উৎসঃ-
সরকারের উল্লেযোগ্য আয়ের উৎস বনভূমি। বনজ সম্পদ বিক্রয় এবং বনজ সম্পদের ওপর কর ধার্য করে সরকার প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করে থাকে।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রঃ-
বন হতে সম্পদ যেমন কাঠ, মধু, মোম, ফলমূল, জীবজন্তুর চামড়া, শিং ইত্যাদি সংগ্রহ করে অনেক লোক জীবিকা নির্বাহ করে ফলে কর্মের সংস্থান হয়। তাই বনভূমি জীবকা নির্বাহের ওপর অত্যান্ত প্রভাব বিস্তার করে।
পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রঃ-
বৈদেশিক পর্যটকগণ বনভূমির সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হন। ফলে প্রতি বছর বহু পর্যটক বনভূমি সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বাংলাদেশে আগমন করেন। এতে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন এবং অপরদিকে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণঃ-
বনভূমি বাতাসে আর্দ্রতা রক্ষা করে এবং বৃষ্টিপাত সংঘটনে সাহায্য করে। অন্যদিকে উপকূলবর্তী বনভূমি বিশেষত সুন্দরবন সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, ঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের করালগ্রাস হতে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ নিয়ন্ত্রণের ফলে একদিকে জীবন ও সম্পদ রক্ষা পায় অপরদিকে সরকারের অর্থের অপচয় রোধ করে।
প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহঃ-
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বনভূমি হতে সংগ্রহ করা যায়। বনভূমি হতে কাঠ, ফলমূল, বাঁশ, বেত, মধু, মোম, জীবজন্তুর চামড়া শিং, ঘাসও ঔষধের কাঁচামাল প্রভৃতি বনভূমি হতে পাওয়া যায়।
রাজনৈতিক গুরুত্বঃ-
বনভূমি আমাদের দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্ববহন করছে। সীমান্ত অঞ্চলে বনভূমির অস্তিত্ব থাকলে দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে সহজেই রক্ষা করা যায়।
খাদ্যের উপাদান হিসেবেঃ-
দেশের সুন্দরবনাঞ্চলে নদী থাকায় সেখান থেকে প্রচুর মৎস্য ধরা পড়ে। দেশের জনগণের প্রোটিন জাতীয় উপাদান পূরণে মৎস্যের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।