ব্যাভিচারের ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তিঃ-
কথায় বলে, "লাতের ভূত কথায় নামে না'। তাই শরীয়ত শর্ত ভঙ্গকারী ও সীমালানকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে। উপরন্তু এ সকল শাস্তি নির্ধারিত হয় অপরাধের ধরন অনুযায়ী। নিচের লিংকে প্রবেশ দেখে নিন ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তি কি? সেখানে ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তির কথা বিস্তারিত দেয়া আছে।
https://www.ask-ans.com/72601/
এখন আসি ব্যভিচারের পরকালীন শাস্তির আলোচনায়।
এক হাদীস থেকে বোঝা যায় ব্যভিচারের শাস্তি ছয়টি। তিনটি দুনিয়ায় ও তিনটি আখেরাতে।
■ দুনিয়ার তিনটি হলোঃ-
১. চেহারার লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়।
২. দরিদ্রতা ও অভাব-অনটন দেখা দেয়।
৩. বয়স কমে যায়।
এটা হচ্ছে দুনিয়াতেই আল্লাহর মাইর, অর্থ্যাৎ ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি ছাড়াও আল্লাহপ্রদত্ত দুনিয়াবি শাস্তি। আর
■ আখেরাতের তিনটি শাস্তি হলোঃ-
১. আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
২. কেয়ামতের দিন তার হিসাব কঠিন করা হবে।
৩. চিরকাল সে জাহান্নামে থাকবে।
এছাড়াও বিভিন্ন হাদীস অধ্যয়নে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হবার পর তাওবা না করেই দুনিয়া ত্যাগ করবে, তার ওপর বিপদাপদের ঢল নেমে আসবে। আল্লাহ তা'আলা তার সাথে কঠোর আচরণ করবেন। ব্যভিচারের প্রতিটি কাজের পরিবর্তে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। নিচে এর বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হলোঃ-
১. পরপুরুষের জন্য যারা চেহারা সজ্জিত করত, কেয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে।
২. গাইরে মাহরামদের চেহারার দিকে যারা ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকাত, কেয়ামতের দিন তাদের চেহারার মাংস খসে পড়বে।
৩. গাইরে মাহরামের সামনে যে তার চেহারা খোলা রাখত, কেয়ামতের দিন তার চেহারা আগুনে ঝলসে দেয়া হবে।
৪. গাইরে মাহরামের সাথে যে মনকাড়া আলাপচারিতায় লিপ্ত থাকত, কেয়ামতের দিন সে ক্রন্দনরত অবস্থায় উঠবে।
৫. গাইরে মাহরামের সাথে যে রস-রসিকতা করত, অট্টহাসিতে ফেটে পড়ত, কেয়ামতের দিন তাকে পিটিয়ে পিটিয়ে উঠানো হবে।
৬. গাইরে মাহরামের সাক্ষাৎ লাভে যে পুলকিত হতো, কেয়ামতের দিন সে উদাস ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠবে।
৭. গাইরে মাহরামকে যে কামাতুর দৃষ্টিতে দেখত, কেয়ামতের দিন তার চোখে গলিত সিসা ঢেলে দেয়া হবে।
৮. গাইরে মাহরামের সাথে দেখা করার জন্য যে পায়ে হেঁটে অগ্রসর হয়েছে, কেয়ামতের দিন তার পায়ে বেড়ি পরানো হবে।
৯. গাইরে মাহরামের সাথে যে হাত ধরাধরি করত, কেয়ামতের দিন তার হাতে আগুনের চুড়ি পরানো হবে।
১০. গাইরে মাহরামের যে সাথে চুমোচুমি করত, কেয়ামতের দিন তাকে অধোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
১১. গাইরে মাহরামের সাথে যে গলা মিলাত, কেয়ামতের দিন গর্দানে আগুনের শেকল পরানো হবে।
১২. গাইরে মাহরামের সামনে যে স্বীয় লজ্জাস্থানের কাপড় খুলত, কেয়ামতের দিন তাকে আগুনের কাঁটাযুক্ত পোশাক পরিধান করানো হবে।
১৩. গাইরে মাহরামের সাথে মিলিত হয়ে যে স্বীয় জৈবিক চাহিদা পূরণ করত, কেয়ামতের দিন তাকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় উঠানো হবে।
১৪. গাইরে মাহরামের সাথে মিলনের সময় যার উত্তেজনার ঝড় বয়ে যেত, কেয়ামতের দিন তার লজ্জাস্থানে আগুনের ছেঁকা দেয়া হবে।
১৫. গাইরে মাহরামের সাথে মিলনের ফলে যার লজ্জাস্থান থেকে বীর্যস্খলিত হয়েছে, কেয়ামতের দিন তার লজ্জাস্থান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকবে।
১৬. গাইরে মাহরামের চুলে যে ভালোবাসার পরশ বুলিয়েছে, কেয়ামতের দিন তার চুল ধরে জাহান্নামে টেনে নিয়ে যাবে।
১৭. যে ব্যক্তি কোনো গাইরে মাহরামের স্তন স্পর্শ করেছে, মুখে নিয়েছে, কেয়ামতের দিন গুপ্তাঙ্গের লোম দিয়ে তাকে জাহান্নামে ঝুলানো হবে।
১৮. যে ব্যক্তি গাইরে মাহরামের শরীরের ঘ্রাণ শুঁকেছে, কেয়ামতের দিন তার শরীর থেকে অসহ্যকর, দুর্বিষহ দূর্গন্ধ বের হবে।
১৯. গাইরে মাহরামের সাথে যে এক বিছানায় একত্রে মিলিত হয়েছে, কেয়ামতের দিন আগুনের চুলায় দুজনকে একত্র করা হবে।
২০. গাইরে মাহরামের সামনে যে উলঙ্গ হয়েছে, কেয়ামতের দিন তাকে মহান আল্লাহ্ পাক জাল্লা জালালুহু ওয়া আম্মা নাওয়ালুহু এর সামনে তাকে উলঙ্গ করে উঠানো হবে।
২১. গাইরে মাহরামের সাথে ব্যভিচার করার জন্য যে লোকদের থেকে আড়াল হয়েছে, কেয়ামতের দিন সমস্ত মাখলুকের সামনে তাকে অপদস্থ করা হবে।
২২. গাইরে মাহরামের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখার জন্য মানুষকে যে মিথ্যা বলেছে, কেয়ামতের দিন তার মুখে মোহর মেরে দিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।
২৩. গাইরে মাহরাম থেকে যে নিজের শরীর ও রূপের প্রশংসা শুনেছে, কেয়ামতের দিন সকল মানুষ তাকে অভিশাপ দেবে।
২৪. গাইরে মাহরামকে যে সালাম করত, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তার উপর লানত বর্ষণ করবেন।
২৫. গাইরে মাহরামের শরীরে যে চুমু খেয়েছে, কেয়ামতের দিন তার পুরো শরীরে সাপ দংশন করবে।
২৬. গাইরে মাহরামের সাথে ব্যভিচারের সময় যে নর-নারী রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বাদ উপভোগ করেছে, কেয়ামতের দিন তাদের সর্বাঙ্গে বিচ্ছু দংশন করবে।
২৭. পরনারীর শরীরে যে ব্যক্তি স্বাধীনতা পেয়েছে, কেয়ামতের দিন ওই নারীর স্বামী তার নেক আমলে স্বাধীনতা লাভ করবে।
২৮. যে ব্যক্তি পরনারীর দেহের ওপর চড়েছে, কেয়ামতের দিন ওই নারীর স্বামীর গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে।
২৯. গাইরে মাহরামের সাথে যে বা যারা চিরদিনের বন্ধুত্বের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে, (আজকাল অনলাইন ও অফলাইনে যা অহরহ হচ্ছে!) কেয়ামতের দিন তারা চিরকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।
৩০. গাইরে মাহরামের সাথে যারা একান্তে আলাপনের স্বাদ আস্বাদন করেছে, কেয়ামতের দিন তারা আল্লাহ্ তা'আলার সাথে (দিদার তথা সাক্ষাৎ ও) একান্ত আলাপনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে বোঝা গেল যে, ব্যভিচারের সাজা যতটা গুনে গুনে প্রতিটি পদক্ষেপ অনুযায়ী দেয়া হবে, অন্য কোনো অপরাধের সাজা ততটা পদক্ষেপ অনুপাতে দেয়া হবে না। সবচেয়ে বড় সাজা হলো আল্লাহ তা'আলার সাথে একান্ত আলাপনের সুযোগ পাবে না; বরং ব্যভিচারী ও ব্যভিচারীণীর উপর আল্লাহ তায়ালা লা'নত বর্ষণ করবেন। অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে, আমাদের পরিবার-পরিজনকে, আমাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে, কেয়ামত পর্যন্ত আগত প্রজন্মকে এবং আমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যভিচার থেকে পূর্ণ হেফাজত করেন।
আমীন ইয়া আরহামার রাহিমীন।