রক্তকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
-
রক্তরস (Plasma): রক্তের ৫৫% অংশ হলো রক্তরস। এটি একটি স্বচ্ছ, হলুদ তরল। রক্তরস মূলত পানি দিয়ে তৈরি, যার মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, গ্লুকোজ, খনিজ আয়ন, হরমোন, কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি।
-
লোহিত রক্তকণিকা (Red blood cells): রক্তের ৩৫% অংশ হলো লোহিত রক্তকণিকা। এগুলো লাল রঙের এবং তাদের মধ্যে হিমোগ্লোবিন থাকে, যা অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে।
-
শ্বেত রক্তকণিকা (White blood cells): রক্তের ১% অংশ হলো শ্বেত রক্তকণিকা। এগুলো বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এই তিনটি উপাদানের পাশাপাশি রক্তের মধ্যে অণুচক্রিকা (Platelets)ও থাকে। অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
রক্তের শ্রেণীবিভাগ
রক্তের শ্রেণীবিভাগ মূলত রক্তের অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে করা হয়। রক্তের অ্যান্টিজেন হলো কোষের পৃষ্ঠে উপস্থিত বিশেষ ধরনের প্রোটিন। অ্যান্টিবডি হলো রক্তের প্লাজমায় উপস্থিত বিশেষ ধরনের প্রোটিন।
মানুষের রক্তের প্রধান দুটি অ্যান্টিজেন হলো A এবং B। এছাড়াও, কিছু মানুষের রক্তের মধ্যে Rh অ্যান্টিজেন থাকে, যা Rh-পজিটিভ নামে পরিচিত। Rh-পজিটিভ রক্তের মানুষের রক্ত Rh-নেগেটিভ রক্তের মানুষের সাথে মিশে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
রক্তের অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে রক্তকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:
-
O রক্ত: এই রক্তের মধ্যে A বা B অ্যান্টিজেন নেই এবং Rh অ্যান্টিজেনও নেই। তাই O রক্তকে "সার্বজনীন দাতা" বলা হয়, কারণ এটি যেকোনো রক্তের গ্রুপের মানুষের সাথে মিশে যেতে পারে।
-
A রক্ত: এই রক্তের মধ্যে A অ্যান্টিজেন আছে এবং Rh অ্যান্টিজেনও আছে।
-
B রক্ত: এই রক্তের মধ্যে B অ্যান্টিজেন আছে এবং Rh অ্যান্টিজেনও আছে।
-
AB রক্ত: এই রক্তের মধ্যে A এবং B অ্যান্টিজেন আছে এবং Rh অ্যান্টিজেনও আছে। তাই AB রক্তকে "সার্বজনীন গ্রহীতা" বলা হয়, কারণ এটি যেকোনো রক্তের গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারে।
রক্তদানের ক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপের মিল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্তের গ্রুপের মিল না থাকলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যা গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।