একটা মিসাইল দেখতে যেমন হালকা স্লিম আর গতিশীল, এর ভেতরের গঠন তেমনি জটিল ও পরিকল্পিত। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও, এর ভেতরে থাকে একেকটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা একসাথে কাজ করে মিসাইলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। চলুন সহজ ভাষায় বুঝে নিই মিসাইল আসলে কীভাবে চলে এবং ভেতরে কী কী থাকে।
প্রথমেই আসে নোজকোন বা সামনের মাথা। এই অংশটা সাধারণত অনেক শক্ত ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়, যাতে বাতাস কাটতে সহজ হয় এবং বেশি গতিতে এগোতে পারে। নোজকোনের পেছনে থাকে সিকার বা গাইডেন্স সিস্টেম। এটিই হলো মিসাইলের “চোখ”। শত্রুর টার্গেট কোথায় আছে, সেটা খুঁজে বের করে এই সিস্টেম। কারো গায়ে ইনফ্রারেড তাপ থাকলে সেটা ধরতে পারে, কেউ রাডার দিয়ে সিগনাল পাঠালে সেটাও বুঝতে পারে।
এরপর থাকে নেভিগেশন সিস্টেম। এটি নির্ধারণ করে যে, মিসাইল কোন পথ দিয়ে যাবে। সাধারণত GPS, ইনারশিয়াল ন্যাভিগেশন (INS), বা রাডার গাইডেন্স সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এরপর থাকে কন্ট্রোল ইউনিট, যা মিসাইলের পাখা বা “ফিন”গুলোকে সামঞ্জস্য করে দেয়, যেন ঠিকভাবে বাঁক নেয়া যায়।
মিসাইলের সবচেয়ে ভয়ংকর অংশ হলো ওয়ারহেড, অর্থাৎ বিস্ফোরক। এই অংশে থাকে বিস্ফোরণ ঘটানোর উপকরণ, যেমন TNT বা অন্য কোনো আধুনিক বিস্ফোরক পদার্থ। তবে ওয়ারহেড তখনই বিস্ফোরণ ঘটায়, যখন ফিউজ নামের একটি অংশ কাজ করে। এই ফিউজ ঠিক সময়ে, অর্থাৎ টার্গেটে লাগার সঙ্গে সঙ্গে বা কাছাকাছি গিয়ে, ওয়ারহেডকে ট্রিগার করে।
সবশেষে থাকে প্রপালশন সিস্টেম, মানে যে অংশটা মিসাইলকে ঠেলে সামনে এগিয়ে দেয়। এটি হতে পারে রকেট ইঞ্জিন বা জেট ইঞ্জিন। বেশিরভাগ সময় সলিড ফুয়েল রকেট ব্যবহার করা হয়, যেটা হালকা, কম জটিল এবং শক্তিশালী।
এই পুরো যন্ত্রটা বাইরের শক্ত কেসিংয়ে ঢাকা থাকে, যাতে তীব্র গতি ও তাপের মধ্যে এর ভেতরের যন্ত্রপাতিগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
যখন মিসাইলকে লঞ্চ করা হয়, প্রথমে এর ইঞ্জিন জ্বলে উঠে। এরপর গাইডেন্স সিস্টেমের নির্দেশে সেটি নির্ধারিত পথে এগোতে থাকে। পথে চলার সময় এটি ফিনগুলোর মাধ্যমে ডানে-বামে বাঁক নিতে পারে। একবার লক্ষ্যবস্তু ঠিক পেলে, সেটি সোজা গিয়ে আঘাত করে বা কাছাকাছি গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।
একটি মিসাইল কেবল এক টুকরো ধাতব বস্তু নয়। বরং এটি বহু প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি এক বুদ্ধিমান অস্ত্র, যা নির্ভুলভাবে আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে।