যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি দু'বার এবং ক্রোমোজোম একবার বিভাজিত হয়ে একটি মাতৃকোষ হতে চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয় এবং অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেক হয়, তাকে মিয়োসিস বলে। সংক্ষেপে, যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নতুন সৃষ্ট কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়, তাকে মিয়োসিস বা মীয়োসিস বলে।
মিয়োসিস বিভাজন দুটি দফায় সম্পন্ন হয়, যাকে মিয়োসিস-১ এবং মিয়োসিস-২ বলে।
মিয়োসিস-১
মিয়োসিস-১ প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি একবার বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজোম সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না। তবে, হোমোলোগাস ক্রোমোজোমগুলো জোড়ায় জোড়ায় মিলিত হয়ে বাইভ্যালেন্ট সৃষ্টি করে। এই জোড়ায় প্রত্যেক ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিড নিয়ে গঠিত হয়।
মিয়োসিস-১ প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত ধাপগুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়:
-
প্রমেয়াফেজ-১: এই দশায় ক্রোমোজোমগুলো সংকুচিত ও দৃঢ় হয়। সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয় এবং প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডগুলো আলাদা হয়ে যায়।
-
মেটাফেজ-১: এই দশায় ক্রোমোজোমগুলো কোষের মধ্যবর্তী তলে সজ্জিত হয়।
-
অ্যানাফেজ-১: এই দশায় হোমোলোগাস ক্রোমোজোমগুলোর একটি মাতৃকোষের একটি মেরুতে এবং অপরটি অন্য মেরুতে চলে যায়।
-
টেলোফেজ-১: এই দশায় মাইটোকন্ড্রিয়া ও নিউক্লিওপ্লাজম বিভাজিত হয়। দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
মিয়োসিস-২
মিয়োসিস-২ প্রক্রিয়ায় প্রতিটি অপত্য নিউক্লিয়াসটি আরও একবার বিভাজিত হয়ে চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়।
মিয়োসিস-২ প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত ধাপগুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়:
-
প্রমেয়াফেজ-২: এই দশায় মাইটোটিক স্পিন্ডল গঠিত হয়।
-
মেটাফেজ-২: এই দশায় ক্রোমাটিডগুলো কোষের মধ্যবর্তী তলে সজ্জিত হয়।
-
অ্যানাফেজ-২: এই দশায় ক্রোমাটিডগুলোর প্রতিটি আলাদা হয়ে পৃথক পৃথক মেরুতে চলে যায়।
-
টেলোফেজ-২: এই দশায় মাইটোকন্ড্রিয়া ও নিউক্লিওপ্লাজম বিভাজিত হয়। চারটি অপত্য কোষ গঠিত হয়।
মিয়োসিস বিভাজনের গুরুত্ব
মিয়োসিস বিভাজনের গুরুত্ব নিম্নরূপ:
-
প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে: মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপন্ন হয়। এই গ্যামেটগুলোর মিলনের ফলে ডিপ্লয়েড জাইগোট সৃষ্টি হয়।
-
জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে সাহায্য করে: মিয়োসিস বিভাজনের সময় ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে জিনের বিনিময় ঘটে। ফলে নতুন জিনগত বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়।
-
জীবের বৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে: মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্ট জিনগত বৈচিত্র্য জীবের বৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে।
মিয়োসিস বিভাজনের বিভিন্ন ধরনের কোষে দেখা যায়