80 বার দেখা হয়েছে
"মাদ্রাসা" বিভাগে করেছেন

1 টি উত্তর

1 টি পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর

ইমাম আবুল হাসান আশআরী এবং ইমাম আবূ মানসূর মাতুরীদী উভয়ই সুন্নী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কিছু কিছু ব্যাপারে মতবিরোধও পাওয়া যায়, তবে অধিকাংশ মৌলিক বিষয়সমূহে তাঁরা ঐক্যমত্য কিংবা কাছাকাছি মত পোষণ করতেন। যে সব বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, তা তেমন কোন মৌলিক বিষয় নয়। তাঁদের মধ্যে যে সকল বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, তার সংখ্যা প্রায় ৪০ বলে বর্ণনা করা হয়। কেউ কেউ তার সংখ্যা ৫০ পর্যন্ত বলেছেন । তন্মধ্যে উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলঃ- 

১. বস্তুসমূহের ভাল এবং মন্দ হলো জ্ঞানগত, 

২. আল্লাহ কাউকে শক্তির বাইরে কষ্ট দেন না, 

৩. আল্লাহর সকল কাজ কল্যাণের উপর ভিত্তিশীল,

৪. মানুষের স্বীয় কার্যাবলীর উপর ক্ষমতা ও ইখতিয়ার রয়েছে এবং এই ক্ষমতা উক্ত কার্যাবলীর অস্তিত্বের উপর প্রভাব রাখে,

৫. জ্ঞান এর মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ,

৬. আল্লাহ যুলুম করেন না এবং তাঁর যালেম বা অত্যাচারী হওয়া জ্ঞানগতভাবে অসম্ভব,

৭. ঈমান হ্রাস পায় না এবং বৃদ্ধিও হয় না,

৮. আল্লাহকে যথাযথ ভাবে চেনা সম্ভব,

৯. জীবন সম্পর্কে হতাশ হওয়া অবস্থায়ও তওবা কবুল হয়, 

১০. পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা কোন বস্তু অনুভব করা ইলম নয়, বরং ইলম-এর মাধ্যম ইত্যাদি। 

আশআরিয়্যারা উল্লেখিত আকীদাসমূহের ক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণ করে। আশআরিয়্যারা মালিকী ও শাফিঈ মাযহাবের মাসায়েলের উপর ভিত্তি করে এসব বিষয়ে মতবাদ দাঁড় করিয়েছেন। পক্ষান্তরে মাতূরীদীগণ এ ক্ষেত্রে ইমাম আযম আবূ হানীফার ভাষ্যসমূহকে গ্রহণ করেছেন। তবে এই মতবিরোধ তেমন কোন মৌলিক মতবিরোধ নয়। যেমন নিম্নে উপরোক্ত মতবাদ সমূহের কয়েকটির বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে বিষয়টা স্পষ্ট করার প্রয়াস নেয়া গেল। 

(১) বস্তুসমূহের ভাল ও মন্দ প্রসঙ্গঃ- 

আশআরিয়্যাদের নিকট বস্তুসমূহের মধ্যে মূলতঃ কোন ভালো কিংবা মন্দ নিহিত নেই, বরং উক্ত ভালো এবং মন্দ শরীআতের উপর নির্ভরশীল। কোন কাজ বা কোন বস্তু এজন্য উৎকৃষ্ট যে, শরী'আত তার নির্দেশ দিয়েছে এবং নিকৃষ্ট এজন্য যে, শরী'আত তা করতে নিষেধ করেছে। মাতুরীদির মতে বস্তুসমূহ মূলতঃ হয় উৎকৃষ্ট না হয় নিকৃষ্ট এবং তার উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট হওয়া জ্ঞানের সাহায্যে অনুভব করা যেতে পারে। মু'তাযিলাগণও জ্ঞানগত ভাল ও মন্দের কথা বলেন, তবে তাদের এবং মাতূরীদিয়াদের চিন্তা ও মতের মধ্যে পার্থক্য হল- মু'তাযিলাদের নিকট যে জিনিস জ্ঞানগতভাবে উৎকৃষ্ট তা সম্পাদন করা ওয়াজিব এবং যে জিনিস নিকৃষ্ট তা হারাম। মাতুরীদীগণ যদিও স্বীকার করেন যে, বস্তুসমূহের উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট হওয়ার অনুভব জ্ঞান দ্বারা সম্ভব, তবে তাদের মতে মানুষ কেবল এই কারণে মুকাল্লাফ এবং আদিষ্ট হয় না, বরং মুকাল্লাফ ও আদিষ্ট হওয়ার (অর্থাৎ উৎকৃষ্ট কাজ সম্পাদন ও নিকৃষ্ট কাজ পরিহার বিষয়ে) আদিষ্ট হওয়ার জন্য শরী'আতের নির্দেশ অপরিহার্য এবং আদেশ-নিষেধ তারই উপর নির্ভরশীল।

(২) আল্লাহ কাউকে তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেন কি না-এ প্রসঙ্গঃ- 

আশআরীয়্যাদের নিকট আল্লাহর জন্য এটা বৈধ যে, তিনি বান্দাদের জন্য এমন সকল কাজ নির্ধারণ করে দিবেন যা সম্পাদন তাদের ক্ষমতার বাইরে। মাতূরীদীগণের মতে আল্লাহ ক্ষমতার বাইরে কোন কাজ করতে কাউকে বাধ্য করেন না। প্রকৃতপক্ষে এই মাসআলাটি আল্লাহর কার্যাবলী মুআল্লাল অথবা গায়রে মুআল্লাল হওয়ার মাসআলা থেকে উদ্ভব হয়েছে। আশআরীয়্যাদের নিকট এটা যুক্তিগ্রাহ্য যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন এবং পাপীকে পুরস্কৃত করতে পারেন। কেননা ভাল কাজের প্রতিদান কেবল আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ এবং পাপের শাস্তি প্রদান আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। আশআরীদের নিকট আল্লাহ তাঁর ওয়াদার খেলাফও করতে পারেন, কিন্তু মাতূরীদিদের নিকট আল্লাহ তাঁর হিকমত পরিবর্তন করেন না এবং তাঁর ওয়াদায় কোনরূপ পরিবর্তন হয় না।  

ان الله لا يخلف الميعاد 

অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না। (সূরাঃ আলে ইমরানঃ ৯)

(৩) আল্লাহর সকল কাজ কল্যাণের উপর ভিত্তিশীল হওয়া প্রসঙ্গঃ- 

এ বিষয়টি এভাবেও পেশ করা যায় যে, আল্লাহর কার্যাবলী মুআল্লাল বিল-ইল্লাত- অর্থাৎ, হেতুর সঙ্গে সম্পর্কিত কি না? মু'তাযিলাদের মতে আল্লাহর সকল কাজ মুআল্লাল বিল-ইল্লাত বা হেতু নির্ভর। কল্যাণ তার ভিত্তিমূল এবং তার কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। অতএব তাঁদের মতে আল্লাহ কোন অকল্যাণকর কাজের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন না; বরং কল্যাণকর কাজের আদেশ করা তাঁর জন্য ওয়াজিব। আশআরীদের মতে আল্লাহর কার্যাবলী গায়রে মুআল্লাল (হেতু নির্ভর নয়)। তিনি তাঁর বান্দাদের বিষয়ে যা খুশী করতে পারেন। এ কারণে বান্দার কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রাখা তাঁর উপর অপরিহার্য নয়। কেননা তাঁকে কারও সম্মুখে জওয়াবদিহী করতে হয় না। আর মাতুরীদীগণের বক্তব্য হল- আল্লাহর সকল কাজ হিকমত এবং কল্যাণের উপর ভিত্তি করেই সংঘটিত হয়। কেননা তিনি সর্বজ্ঞানী এবং সর্বজ্ঞ, তবে তিনি হিকমত এবং কল্যাণের ইচ্ছা ও কামনা করতে বাধ্য নন। অতএব এটা বলা ভুল যে, কল্যাণ সাধন করা তাঁর জন্য অপরিহার্য, কেননা এতে তাঁর সীমাহীন ইচ্ছা ও কামনা এবং পূর্ণ স্বাধীনতা রহিত হয়। তাঁর জন্য কোন কাজ অপরিহার্য করা বৈধ নয়।

(৪) মানুষের স্বীয় কার্যাবলীর উপর ক্ষমতা ও ইখতিয়ার রয়েছে কি-না এবং এই ক্ষমতা উক্ত কার্যাবলীর অস্তিত্বের উপর প্রভাব রাখে কি-না - প্রসঙ্গঃ- 

 এ প্রসঙ্গে ভূমিকা স্বরূপ কয়েকটি কথা জানা আবশ্যক। তা হল জাবরিয়া ফিরকা বলে যে, মানুষের মাঝে কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ইচ্ছা শক্তিরই অস্তিত্ব নেই বরং কার্য সম্পাদনের জন্য মানুষ সম্পূর্ণ বাধ্য। কাদরিয়্যা ফিরকা বলে, মানুষ সকল কাজ নিজ ইচ্ছায় সম্পাদন করে থাকে এবং তার কার্যের সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক নেই বরং মানুষ নিজেই তার কার্যাবলীর সৃষ্টিকর্তা। এ কারণে তারা আল্লাহ প্রদত্ত তাকদীরকে অস্বীকার করতেন। মু'তাযিলাগণও এই আকীদা পোষণ করতেন যে, মানুষ স্বয়ং তার কার্যাবলীর সৃষ্টিকর্তা এবং আল্লাহ কার্যাবলীর সৃষ্টিকর্তা নন। আশআরিয়্যারা এই আকীদায় বিশ্বাসী যে, আল্লাহ সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা। অতএব তিনি মানুষের সকল কার্যেরও সৃষ্টিকর্তা এবং মানুষ কার্যাবলীর সৃষ্টিকর্তা নয়, বরং তা অর্জনকারী। মাতুরীদিয়াদের নিকট মানুষের কার্য সম্পাদন সেই শক্তির বলেই হয়ে থাকে, যা আল্লাহ মানুষের কার্য সম্পাদন অথবা অসম্পাদন উভয়ের ব্যাপারে তাকে দিয়ে রাখেন। অর্থাৎ সে কোন্ কাজ করবে বা কোন্ কাজ করবে না সে ব্যাপারে তার ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে। কার্যলাভের জন্য উক্ত সৃষ্ট শক্তির নাম হল কর্মশক্তি এবং এটা মানুষের মধ্যে কর্ম সম্পাদনের সময় সৃষ্টি হয়ে থাকে। আশাআরিয়্যা এবং মাতুরীদিয়া-র মতবাদের মধ্যে পার্থক্য হল, আশাআরীয়্যারা কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে মানুষকে স্বয়ং ক্ষমতাবান মনে করে না এবং এ কারণে 'উলামাগণ' আশঅারীদের এই ধারণাকে অদৃষ্টবাদের দিকে ধাবিতকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। অপর দিকে মাতুরীদিয়ারা কার্যলাভের ক্ষেত্রে মানুষকে ক্ষমতাবান মনে করে তাদের নিকট মানুষের সকল কার্যাবলী আল্লাহর ইচ্ছায় এবং তাঁর নির্দেশে সম্পাদিত হয়, অবশ্য মানুষের স্বীয় কার্য সম্পর্কে স্বাধীনতা আছে। কেননা তাকে কার্য ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। 

(৫) জ্ঞান এর মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ হওয়া প্রসঙ্গঃ- 

এ বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে ঈমানের মূল বিষয়াদির সাথে সম্পর্কিত। মু'তাযিলাদের মতে জ্ঞানের সাহায্যে আল্লাহর পরিচয় লাভ অপরিহার্য। আশআরীদের মতে নবী প্রেরণের পূর্বে ঈমান ওয়াজিব নয় (অর্থাৎ তার পরিচয় লাভ করা শরী'আতের মাধ্যমে ওয়াজিব, জ্ঞানের মাধ্যমে নয়)। মাতুরীদীদের নিকট আকল বা জ্ঞান আল্লাহর অস্তিত্বের পরিচয় লাভ করতে পারে কিন্তু তা দ্বারা স্থায়ীভাবে শরী'আতের আহকামের পরিচয় লাভ সম্ভব নয়। 

এরকম আরও কিছু প্রশ্ন

2 টি উত্তর
5 নভেম্বর, 2023 "মাদ্রাসা" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Muaz_Hajare
2 টি উত্তর
2 টি উত্তর
2 টি উত্তর
5 নভেম্বর, 2023 "ইসলামের ইতিহাস" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Muaz_Hajare
2 টি উত্তর
5 নভেম্বর, 2023 "মাদ্রাসা" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Muaz_Hajare
3 টি উত্তর
4 নভেম্বর, 2023 "মাদ্রাসা" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Muaz_Hajare
2 টি উত্তর
6 নভেম্বর, 2023 "মাদ্রাসা" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Muaz_Hajare
1 টি উত্তর
17 নভেম্বর, 2021 "অর্থনীতি" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Eshor Chandra
0 টি উত্তর
8 ডিসেম্বর, 2022 "ফতোয়া" বিভাগে প্রশ্ন করেছেন Hasanask

34,050 টি প্রশ্ন

32,999 টি উত্তর

1,576 টি মন্তব্য

3,211 জন সদস্য

Ask Answers সাইটে আপনাকে সুস্বাগতম! এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করতে পারবেন ৷ আর অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখতে পারবেন ৷
23 জন অনলাইনে আছেন
0 জন সদস্য, 23 জন অতিথি
আজকে ভিজিট : 28164
গতকাল ভিজিট : 52219
সর্বমোট ভিজিট : 42718681
  1. MuntasirMahmud

    277 পয়েন্ট

    55 টি উত্তর

    2 টি গ্রশ্ন

  2. Limon54

    100 পয়েন্ট

    19 টি উত্তর

    5 টি গ্রশ্ন

  3. Kuddus

    80 পয়েন্ট

    16 টি উত্তর

    0 টি গ্রশ্ন

  4. TeddyAhsan

    71 পয়েন্ট

    4 টি উত্তর

    1 টি গ্রশ্ন

  5. TAKRIMISLAM

    68 পয়েন্ট

    0 টি উত্তর

    18 টি গ্রশ্ন

এখানে প্রকাশিত সকল প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোন প্রকার আইনি সমস্যা Ask Answers কর্তৃপক্ষ বহন করবে না৷
আজ বঙ্গাব্দ৷
...